শনিবার, ১০ Jun ২০২৩, ০৮:০৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক :— ভূটানের প্রাথমিক ইতিহাস বেশ অস্পষ্ট এবং পৌরাণিক কাহিনীতে ভরা। কিছু অবয়ব এটা প্রমান করে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ এর পূর্বেও এর অস্তিত্ব ছিল। একটা কিংবদন্তি মতে, এই দেশটি কুচ-বিহার এর রাজা সঙ্গলদ্বীপ ৭ম শতাব্দী সময়টায় রাজত্ব করতেন। কিন্তু ৯ম শতাব্দীতে তিব্বতী বৌদ্ধ সন্যাসীদের পালিয়ে আসার পূর্বে এ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধরনা পাওয়া যায় না। ১২তম শতকে ড্রুকপা কাগিউপা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ পর্যন্ত ভূটানে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের প্রাধান্য রয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাস তাদের ধর্মীয় ইতিহাসের সাথে কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ এবং বিভিন্ন মঠ ও মঠের স্কুলের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ভূটান হচ্ছে সেই অল্পসংখ্যক দেশগুলোর একটি যারা তাদের ইতিহাস জুড়ে স্বাধীন। ভূটানকে জয় করা, দখল করা বা বাইরের কারও দ্বারা শাসন করা কখনো সম্ভব হয়নি (তবে সাময়িক উপজাতীয় শাসন ব্যতীত)। ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দীতে কামরুপ রাজত্ব বা তিব্বতীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এমন ধারণা থাকলেও তা পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে কখনো প্রমাণ করা যায়নি। ঐতিহাসিক বিবরণে এটা স্পষ্ট যে, ভূটান ক্রমাগতভাবে এবং সফলভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলেছে।
ভূটানের একত্রীকরণ ঘটে ১৬১৬ সালে যখন পশ্চিমা তিব্বতের গায়াঙ নামগিয়াল নামক একজন লামা যিনি কিনা ঝাবধ্রুং রিনপোচে নামেও পরিচিত, প্রতিদ্বন্দী ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলোকে পরাস্ত করে, ধমীয় আইন ব্যবস্থার প্রয়োগ করে সাংস্কৃতিক ও নাগরিক প্রশাসক পদ্ধতি সমর্থিত একজন শাসক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার মৃত্যুর পর, পরবর্তী ২০০ বছরের জন্য ঝাবধ্রুনের সাম্রাজ্য গৃহযুদ্ধের পাকে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ১৮৮৫ সালে উজিয়েন ওয়াংচুক ক্ষমতা দখলে সক্ষম হন এবং উপমহাদেশে ব্রিটিশদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
১৯০৭ সালে, উজিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের উত্তরাধিকারী শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুকুট পড়েন এবং রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ড্রেক গিয়ালপো (ড্রাগন কিং) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১০ সালে রাজা উগিযেন এবং ব্রিটিশদের মধ্যে পুনাখা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে উল্লেখ থাকে যে, যদি বহিরাগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূটান তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে তবে ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্রিটিশ ভারত হস্তক্ষেপ করবে না। ১৯২৬ সালে ইউজেন ওয়াংচুক মারা গেলে তার ছেলে জিগমে ওয়াংচুক শাসনকর্তা হয় এবং ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নতুন ভারতীয় সরকার স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে ভুটানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৯ সালে ভারত ও ভুটান শান্তি ও সম্প্রীতির চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে উল্লেখ থাকে যে, ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, তবে তাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবে। ১৯৫২ সালে জিগমে ডোরজি ওয়াংচুক ভুটানকে তার বিচ্ছিন্নতা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের একটি নকশা বাস্তাবায়নে সফল হন। নতুন একটি আইনের সাথে সাথে ভূটানের জাতীয় পরিষদ, রয়্যাল ভূটানিজ আর্মি এবং রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালে ভূটান জাতিসংঘের সদস্য হন।
১৯৭২ সালে, জিগমে সিংয়ে ওয়াংচাক সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, শাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি “সর্বজনীন জাতীয় সুখ” এর বিস্তৃত উন্নয়ন দর্শনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন। এটা অনস্বীকার্য যে উন্নয়নের অনেক মাত্রা আছে এবং শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রাই যথেষ্ট নয়। ভূটানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে ২০০৮ এ নতুন সংবিধান প্রবর্তনের অপেক্ষায় না থেকে তিনি ২০০৬ এর ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তার পদ্যাগের পর পুত্র জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূটানের রাজা হন।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply