সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১২ পূর্বাহ্ন
চট্রগ্রাম (বাঁশখালী) থেকে আব্দুল জব্বারঃ— চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়ায় গড়ে উঠেছে সর্বসাধারণের জন্য পাবলিক লাইব্ররী। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ি, মনের মেধা বিকাশের জন্য বই পড়ি। এজন্য চাই হরেক রকম বইয়ের সমাহার ও সন্ধান । চাই মনের মত পছন্দের বই। কিন্তু চাহিদা থাকলেও আমরা যথা সময়ে বই সংগ্রহে রাখতে পারিনা। পছন্দের বই জোগাড় করার সামর্থ না থাকলে ও কিন্তু পাবলিক লাইব্ররী থেকে পড়তে পারব । একারণেই গড়ে উঠে গ্রন্থাগার। পাঠক সেখানে গিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে একাগ্রতা নিয়ে বই পড়তে পারেন। কিন্তু বতমানে বাস্তবতায় আমাদের দেশে এখনও সেভাবে পাঠাগার গড়ে ওঠেনি তবে ছনুয়ার সাগরতীরে গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয়তার তুলনায় মানসম্মত পাঠাগারের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। আর গ্রামাঞ্চলগুলোতে পাঠাগার নেই বললেই চলে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়া থেকে গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা তাই একরকম বঞ্চিতই বটে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিশু-কিশোরদের হাতে বই তুলে দিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামে বিগত ২০১০সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী। উপকূলের বাতিঘর হিসেবেখ্যাত এ পাঠাগারকে ঘিরে এখন বই পড়ার আনন্দে মেতেছে এলাকার তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রায় ১৫০ জন নারী সদস্য লাইব্রেরী থেকে নিয়মিত বই ধার নিয়ে ঘরে বসে অধ্যয়ন করেন। দূরের গ্রামের বই পাঠকরাও লাইব্রেরী থেকে বই ধার নিয়ে অধ্যয়ন করেন নিয়মিত।
আরও পড়ুনঃ রাঙ্গুনিয়ায় খেলোয়াড় কল্যাণ পরিষদ’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠকের জন্য খোলা থাকে এই গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে লাইব্রেরীয়ান হিসেবে দায়িত্বরত জান্নাতুল হুরি জানান, আমাদের লাইব্রেরী প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তিনি জানান, লাইব্রেরীতে বর্তমানে নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা দুই শতাধিক। প্রতিদিন গড়ে ৩০/৩৫ জন পাঠক লাইব্রেরীতে বই পড়তে আসেন।
লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম আল হাবিব জানান, উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী এখানকার উপকূল এলাকার জন্য একটি আলোকিত বাতিঘর। গ্রামের সব শিক্ষার্থী , শিক্ষক ও বইপ্রেমী মানুষের জন্য এটি জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নিরিবিলি প্রতিষ্ঠান। জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাঠকের তুলনায় গ্রন্থাগারে এখনো বইয়ের সংখ্যা কম। তিনি আরো বলেন, অন্য দশটি গ্রন্থাগারের চেয়ে আমাদের গ্রন্থাগারে পাঠকের উপস্থিতি অনেক বেশি।
আরও পড়ুনঃ জলঢাকায় প্রোণ শিক্ষা কর্মসুচির মেধা বৃত্তি প্রদান
ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের মসজিদের খতিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বই পড়ার জন্য উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী একটি ভুমিকা রাখার জায়গা। সবাই এখানে নিয়মিত বই পড়ে । সবার মনের চাহিদা ও খোরাগ মেটানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে আরো বেশি বইয়ের চাহিদা মেটানো প্রয়োজন।
এই পাবলিক লাইব্রেরী নামে ক্রয়কৃত প্রায় ২২ শতক জমির জমির ওপর টিনের ছাউনি পাঠাগারে রয়েছে এক হাজারেরও অধিক বই। ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ , ধর্মীয়, সাহিত্য ও বিজ্ঞানসম্মত এসব বই দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করে আসছে লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ। আর এসব বই সংগ্রহের পিছনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে লেখক, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যানুরাগীরা।
আরও পড়ুনঃ তাজরীন গার্মেন্টসে শ্রমিক হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
বর্তমানে লাইব্রেরীতে রয়েছে তিনটি বুক সেলফ আরও প্রয়োজন তার পাশাপাশি ও চারটি টেবিল ও দশটি চেয়ার আরো প্রয়োজন রয়েছে এসব আসবাবপত্র দিয়ে সেখানেই কোন রকমে সাজানো হয়েছে বই। তাই পছন্দের বই খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হয় সকল পাঠকের লাইব্রেরীতে নিয়মিত পত্রিকা পড়ারও ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন জাতীয়-স্থানীয় তিনটি পত্রিকা থাকলে ও আরো কয়েকটা পএিকা থাকা প্রয়োজন। যার ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও পাঠকরা নিমিষেই সহজেই দেশ-বিদেশের খবরাখবর জানতে পারে। তাছাড়া লাইব্রেরীতে নিয়মিত কবিতা চর্চা, সাহিত্য সভা ও মাসিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতা মুলক অনুষ্ঠিত হয়ে হয়ে থাকে নিয়মিত । প্রতিযোগিতা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে মূল্যবান শিক্ষার উপকরণ মূলক সামগ্রী পুরস্কার দেওয়া হয় সবাইকে। পাঠাগারটি আধুনিকায়নের ছোয়া লাগানোর জন্য দ্রত কাজ এগিয়ে চলছে। সে সাথে বই বাড়ানোর জন্য কাছ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ বাগাতিপাড় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচন
এখানে নিয়মিত বই পড়তে আসা স্কুলছাত্রী রহিমা আক্তার বলেন, এখানে আমরা নিয়মিত বই পড়তে আসি । পত্রিকা পড়ার কারনে দেশ বিদেশের খবরা খবর ও জানতে পারি।
এখানকার পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক বেবী আকতার বলেন, এই লাইব্রেরী আমাদের জন্য আলোর বাতা নিয়ে আসার মত । এই পাবলিক লাইব্রেরীর মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে ও মূল্যবান বইগুলো পড়ার সুযোগ পেয়েছি।
এই ইউনিয়নের শিক্ষানুরাগী লায়ন আমিরুল হক এমরুল কায়েস বলেন, উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরীর কার্যক্রম বরাবরই প্রশংসনীয় দাবী রাখে। এটি আমাদের এলাকার জন্য একটি গর্বিত প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এই গ্রন্থাগার আমাদের এলাকার জন্য আলোকবর্তিকা। এলাকায় পাঠাগার নির্মাণের কাজ আমাদের মুগ্ধ করেছে।
আরও পড়ুনঃ তালতলীতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন
উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানামুখী কর্মসূচি পালন করে আসছে। এছাড়াও সামাজিক ও শিক্ষামূলক কর্মকান্ডও চোখেপড়ার মতো। প্রতিমাসে লাইব্রেরীর পক্ষ থেকে শতাধিক দারিদ্র শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় মাসিক শিক্ষা সামগ্রী। তাছাড়া অতি দারিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার ফরম ফি সহ ইউনিফর্ম ও স্কুল ব্যাগ প্রদান করা হয়।
এই গ্রন্থাগারের ভুমিদাতা-প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংবাদিক সাঈফী আনোয়ারুল আজিম জানান, ২০১০ সালে এলাকার স্থানীয় একটি সাইক্লোন সেল্টারে চারটি চেয়ার একটি টেবিল আর একটি বুক সেলফ নিয়ে লাইব্রেরীর কার্যক্রম করি।
আরও পড়ুনঃ জলঢাকা দিনব্যাপী যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগী অনুসন্ধান কর্মসুচির উদ্বোধন
সাইক্লোন সেল্টারে ১ বছর লাইব্রেরীর কার্যক্রম চালানোর পর শুরু হয় লাইব্রেরীকে স্থায়ী রূপদানের লক্ষে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে লাইব্রেরীর নামে ক্রয় করা হয় ২২ শতক জমি। বর্তমানে ক্রয়কৃত জমির উপর নির্মিত গ্রন্থাগারে পরিচালিত হচ্ছে লাইব্রেীর যাবতীয় কার্যক্রম। তিনি বলেন, আমরা অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই গ্রন্থাগারকে স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপদান করেছি। আমাদের লাইব্রেরী বর্তমানে উপকূলের বাতিঘর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
আমরা জনতার সাথে......“আজকের দিগন্ত ডট কম”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত “আজকের দিগন্ত ডট কম”। অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply